মব ভায়োলেন্সে মৃত্যু বেড়েছে, সতর্ক পুলিশ
- আপলোড সময় : ১৭-১১-২০২৪ ০৭:৫০:১২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৭-১১-২০২৪ ০৭:৫০:১২ অপরাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
২০২০ সালে রাজধানীর বাড্ডায় একটি স্কুলে মেয়ের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান তাসলিমা বেগম ওরফে রেনু। ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে আশপাশ থেকে কয়েকশ’ মানুষ স্কুল প্রাঙ্গণে ঢুকে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। ‘উত্তেজিত জনতা’র (মব) আক্রোশের শিকার হয়ে এরকম মৃতুর খবর পত্রিকার পাতায় পাওয়া যায় প্রায়ই। তবে, গত কয়েক মাসে এই হার বেড়েছে।
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এ প্রবণতা রোধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। গত কয়েক মাসের তুলনায় মবে মৃত্যু কমে এসেছে উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এরকম ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য মাঠ পুলিশকে সতর্ক থাকতে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হওয়ার দাবি করে সংঘবদ্ধ জনতার হামলা দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, আদালতে, এমনকি দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরা পড়া অনেক নেতাকর্মীর ওপরও। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এই গণপিটুনি ও মবের কারণে মৃত্যুর ঘটনা আগেও ঘটেছে কিন্তু এবারের ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন। আগে কথিত চোর-ডাকাত, অপ্রীতিকর হয়রানির অভিযোগ এনে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা বেশি দেখা গেলেও এবারে মিশ্র কারণ উপস্থিত।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গত তিন মাসের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাসে মবের কারণে মৃত্যু ঘটেছে ৬৮ জনের। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি, ২৮ জন। এর আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মবে মৃত্যু ঘটেছে ৩২ জনের। এ বছর জুলাইয়ে কোনও মব নথিবদ্ধ হয়নি। আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, সে বছর মবে ৫১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঢাকায়, ২৫ জন, তারপরে চট্টগ্রামে ১৭ জন। রংপুরে কোনও মবের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়নি।
অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশ্লেষণে গত তিন মাসের হিসাব বলছে, এই তিন মাসে একটি মাত্র গুমের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ৩৫টি, যাতে আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন। সাংবাদিক হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ২৫৫টি। এদিকে শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ১২০, শিশু হত্যা ৮৬। এবং সেটাও সবচেয়ে বেশি ঘটেছে সেপ্টেম্বরেই।
বৃহ¯পতিবার (১৪ নভেম্বর) “জুলাই গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্ভুক্তি এবং ন্যায়বিচার: জনপরিসরে গণতন্ত্র” সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী তিন মাস “মবের মুল্লুক” মনে হয়েছে। এ সময়টাতে দেশের অধিকাংশ লোক নিজেদের মজলুম বলে অনুভব করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন তারা চেষ্টা করছেন সংস্কার করার। তাই তাদের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এই তালিকা কেবল পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে এসেছে যেসব ঘটনা সেগুলোর ওপর নির্ভর করে করা। আমরা বলতে পারি না প্রকৃত সংখ্যা আসলে কতো। কারণ শুরুতে থানায় নথিভুক্ত করার বিষয়ও ছিল না উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আমার মনে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় না থাকায় ঘটনাগুলো বেড়েছে। মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সাহস করেছে এবং নিজেই বিচার করতে চেয়েছে। তিনি বলেন, মব ভায়োলেন্স (দলবদ্ধ সহিংসতা) কেবল মৃত্যুর কারণ হচ্ছে তা নয়, এসময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনেরও কারণ হিসেবে আমরা দেখেছি। সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি।
মব ভায়োলেন্স কমে আসছে উল্লেখ করে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, মব কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আসামি যেই হোক সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি চট্টগ্রামের যে ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে, আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য মাঠ পর্যায়ে প্যাট্রোল বাড়ানোসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে বার্তা দিতে চাই, যেখানে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে, আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে আমাদের জানান, আমরা ত্বরিত ব্যবস্থা নেবো। অপরাধী যেই হোক না কেন, আইনি প্রক্রিয়ায় তার বিচার সম্পাদন হতে হবে। আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। তাই গত কয়েক মাসের চেয়ে মব এখন কমতে শুরু করেছে। -বাংলা ট্রিবিউন
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ